**পঞ্চগড়ের ভাষায় রচিত****
আইজ মুই যে কাহিনীখান তোমাহাক কহিম সেখান মুই মোর বাপের থেকে শুইনচু । প্রায় দশ-পনের বছর আগুত। মেলা দিন আগের কাথা। এক দেশত এক রাজা ছিল (রাজার বসবাস করতেছিল) । রাজার কোন ছুয়াÑপুয়া ছিল নি (ছেলে-মেয়ে)। এ তানে রাজার আর রাণীর খুব দুঃখ । মেলা ডাক্তারÑকবিরাজ শেষ করে দিছে কিন্তু কোন কাজ হয় না। তো একদিন এক লোকের পরামর্শে এক ফকিরের (দরবেশ) কাছত গেল। দরবেশ কহিল কোন চিন্তা করিস না। তোর একটা বেটা (ছেলে) হবে। আর ওয়াই (সে) খুব শক্তিশালী হবে। রাজার তো মহাআনন্দ । দরবেশ একটা গ্লাসত পানি দিল। আর কহিল যে, এ গ্লাসের পানি খান তোমরা দুইজনই খাও । দেখফেন ইনশাআল্লাহ কাজ হয় যাবে। তো অবশেষে রাজার একটা বেটা জন্ম হইল। আদর করে তার নাম রাখিল ‘‘হাতিম” । কিন্তু রাজা তো চিন্তাত পড়ে গেল যে এ খুব শক্তিশালী হবে । এ তানে ( এ জন্য ) রাজা তার বেটাক (ছেলেকে) বিদেশেত পাঠাইদিল যেন সে ভাল করে পড়ালেখা করে আর খারাপ কাজ না করে। অবশেষে হাতিম বীর রাজার স্বপ্ন পূরণ করে বাড়ি চলে আসিল (বাড়ি ফিরে আসল) । তো হাতিম হাত মুখ ধুয়ে ঘরত খাবা গেল । আর এ সুযোগে হাতিমক (হাতিমকে) খুশি করার তানে (জন্য) ওয়ার বাপ একটা ঘর বানাইছিল প্রায় ১০ বছর ধরে। আর এ সুখবরটা রাজা তার বেটা হাতিমক জানাইল। তো হাতিম চিন্তা কইল যে মোর বাপ মোর তানে বলে এতদিন তে ঘর বানাইছে, তো দখু (দেখি) কেরং শক্ত হইছে!! । কো একি কান্ড হাতিম খালি একটা আঙ্গুলের ঠেসা (ছুয়া) দিছে ওমনে গোটা ঘরটা ধিরিমধারাম (হুরমুর) করে ভাঙ্গে গেল। রাজার তো মহা রাগ ধরিল যে মোর বেটা (ছেলে) কি কইছে (কি কান্ড করছে), মুই ওয়াক বাহিরত পাঠাইচিনু পড়ালেখা করবা আর ওয়াই শিখচে (শিা গ্রহণ করছে) বীরগিরি (বীরত্বপনা) । এ তানে রাজা ওয়ার বেটাক বাড়িতে বাহির করে দিল। আর গোটা রাজ্য তার ঢোল পিটাই দিল । আর হাতিম কি করবে!! ওয়াই বাড়িতে সুন্দর করে বাহির হই গেল। হাতিম তো উদ্দেশ্য বিহীন হাটেচে, যেঠে রাইত সেঠে কাইত। তো একদিন হাতিম দেখিল একটা লোক একটা বিরাট পাখুরী গাছ হাতত লে হেনে বসে আছে আর ওই পাখুরী গাছের ছায়াত বসে লোক পাটা কামাছে (পাট তে নেলাচ্ছে)। হাতিম বীর ওক দেখে কহিল তুই আরো কোন বীর রে যে, এত বড় পাখরি গাছ টা হাতত লেহেনে আছি। পাখোরা বীর কহচে আরে মুই আর কি? হাতিম বীর তো আঙ্গুলের ঠেসায় ওর বাপের তৈরি করা ১০ বছরের সাধনা ঘরটাক আঙ্গুলের ঠেসায় ভাঙ্গে ফেলছে। আর ওইতানে ওক বাড়িতে বাহির করে দিছে । হাতিম বীর কহচে, আরে মুহে তো হাতিম বীর (উল্লেখ্য যে, পাখরী গাছ হাতে নেওয়ার কারণে তার নাম হাতিম পাখরা বীর রাখল)। পাখোরা বীর কহচে (পাখরা বীর বলতেছে) তোমাক মুই ওস্তাদ মানেছু মোকো তোমাহর  লগো লে চল (সাথে নিয়ে  চলেন)। হাতিম বীর কহচে আচ্ছা লে চল মোর তাইলে একটা সঙ্গি বারে গেল- যাক সুবিধা হইল তাহু, একটা সাথী পাইল গেল। দুইজনে মিলে যাছে তো যাছে উদ্দেশ্যবিহীন। যাইতে যাইতে এমন সময় দেখিল যে একটা লোক হাটুডাত (হাটুতে) ভেল্লা ভতরাপড়া (মর্চে পড়া) চাকু লা চখাছে (ধারদিচ্ছে)। ইমরা তো দেখে অবাক। তো ওয়াক দুইজনে (হাতিম বীর ও পাখোরা বীর) জিজ্ঞাস করিল যে, তুই আরোহ (আবার) কোন বীর যে, হাটুত আবার চখাচি (ধারদিচ্ছি)। ইয়াহ্ঃ ওইডাই কাথা কহচে (একই কথা বলতেছে) যে, আরে মুই আর কি? হাতিম বীর তো আঙ্গুলের ঠেসায় ওর বাপের তৈরি করা ১০ বছরের সাধনা ঘরটাক আঙ্গুলের ঠেসায় ভাঙ্গে ফেলছে। আর ওইতানে ওক বাড়িতে বাহির করে দিছে । ওই সময় হাতিম বীর কহচে, আরে মুহে তো হাতিম বীর।  লোহা ধার দেওয়ার  কারণে তার নাম হাতিম বীর  লোহাডাঙ্গা বীর রাখল । ইয়াহ্ঃ সেই একটা কথা কহিল যে, (লোহাডাঙ্গা বীর বলতেছে) তোমাক মুই ওস্তাদ মানেছু মোকো তুমরা তোমাহর  লগো লে চল (সাথে নিয়ে  চলেন)। হাতিম বীর কহিল আচ্ছ ঠিক আছে চল কেনে যাবা চাহাচি। আবার তিনজন মিলে যাওয়া শুরু কইল । যাইতে যাইতে সামনত ইমরা (এরা) আরেকটা লোকক দেখেচে যে, ভৈুসলা (মহিষগুলো) নেংগর লা (লেজগুলো) ধরে ৪-৫ ভৈুস (মহিষ) একসাথে নদী পার করছে। তখন ইমরা সবাাই কহিল যে, তুই আরোহঃ (আবার) কোন বীর যে, এক সাথে ৪-৫ ভৈুস (মহিষ) একসাথে নদী পার করছি। তখন ইয়াহঃ সেই একটা কাথা কহিল যে, হাতিম বীর তো আঙ্গুলের ঠেসায় ঘর ভাঙ্গিচে তাও আবার ওর বাপ সেই ঘরটা ১০ বছর ধরে উঠাইচে ( ১০ বছর ধরে তৈরি করছে) । পাখোরা বীর আও লোহাডাঙ্গা বীর কহিল যে, এই তো হাতিম বীর ইয়াক হামরা ওস্তাদ মানিছি। তখন ওয়াই কহিল মোকে তোমার লগি লে যাও । তখন ইমরাহ সবাই ওয়াক সাথত লেওয়ার সম্মতি দিল। এলা ইমরাহ তাইলে ৪ জন সঙ্গী হইল্। আর ইমরাহ ওর নাম রাখিল ভৈুস ওভা বীর। আবার ইমরাহ চার জন মিলে যাবা শুরু কইল (চলা শুরু করল) । যাইতে যাইতে ইমরাহঃ দেখিল সামনত একটা গ্রাম কিন্তু গ্রামের এ কি কান্ড কোন লোক নাই। এখন ইমরাহ চিন্তা করছে যে ব্যাপার কি কোন লোক জন নাই অথচ বিশাল বিশাল বিল্ডিং বাড়ি রাজবাড়ি সব আছে । কো ইমরাহঃ চিন্তা কইল রাজবাড়ির ভিতরত যাই যাইলে বুঝা যাবে কি অবস্থাত এরকম কেনেহ্ । তো ইমরাহ রাজাড়ির ভিতরত যেমনে গেল দেখছে রাজ বাড়ির যে দারোয়ান লা ছিল ওমরাহ সবাই মিলে ইমাক ছুরি দে মারে দিল । হাতিম বীর সাথে সাথে সেডা প্রতিরোধ কইল । ইমারাহ কারণ জানবা চাহিল যে, হামাক তোমরা কেনে মারিলেন। সেলা ওমরাহ কহিল যে, এঠে (এখানে) একটা বিশাল রাুস আছে যাকে পাছে তাকে খায় ফিলাচে গ্রামের প্রায় সব লোকক খাই ফিলাইচে তাতে হামরা মনে কইসনো যে, তোমরা মনে রাুস তাতে তোমাহক হামরা না দেখে মাইসনো। হাতিম বীর কহিল ওওওওওওওও তাতে!!! আচ্ছা তো রাুস টা কতুণে আচ্চে। দারোয়ান কহিল রাইত করে আচ্ছে।  হাতিমবীর কহিল ঠিক আছে দেখু মুই কেরং সালার রাুস আইজকা রাুসক মারে তারপর এ গ্রাম থেকে যাম হামরালা কি কহেন তোমরা?? কিরে পাখোরা বীর, লোহাডাঙ্গা বীর, ভৈূস ওভাবীর। ইমরাহলা (এরা) সবাই কহিল ঠিক আছে । এ খবর শুনে রাজা ওমাহর লগি চুক্তি বদ্ধ হইল যে, তোমরাহ ৪ জনের যাহে রাুস মারবা পাববেন তারে লগি মোর বেটিক দে বিহাই দিম (মেয়ের সাথে রাজা বিয়ে দিবে)  ইমরাহ রাজি হইল ......................(চলবে)