লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৪ মে ২০০৯, ১১:৩২ PM)
ক্যাটেগরি:গল্প অণুগল্প সাহিত্য

অন্ধকার রাত, অমাবস্যা রাতের এই ঘুটঘুটে কালো অন্ধকারেই একাকী হেঁটে যাচ্ছে বিপুল। তার হাতে কোন আলো নেই এমনকি আলো জ্বালাবার কোন উপকরণও নেই। তবুও সে হাঁটছে নির্ভীক নিশাচরের মত। মধ্যরাতের এই নিঃস্তব্ধতাকে ভেদ করে কেবল তার হেঁটে চলার শব্দ ভেসে আসছে। গাছের ঝরা শুকনো পাতা মাড়িয়ে যাওয়ার শব্দ অন্ধকারটাকে যেন আরও ভয়ঙ্কর করে তুলেছে। অথচ তার আচরণে ভয়ের বিন্দুমাত্র চিহ্নটি নেই। সে এগিয়ে যাচ্ছে গোরস্থানের দিকে, তার হাতে একটি মরা বেড়াল। তার সম্মুখে ঘন গাছের সারি, তার পরে আরও আধ মাইলের মত রাস্তা, তারপর গোরস্থান।

হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ থেমে পড়ে বিপুল। তার পাতা মাড়ানোর শব্দ থেমে গেল কিন্তু আরও একটা প্রাণীর হেঁটে আসার শব্দ তখনও স্পষ্ট। পিছন ফিরে তাকালো বিপুল, ঘুটঘুটে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না তার, তবে শব্দটা থেমে যায়। পৃথিবী এখন নীরব, নিজের শ্বাস প্রশ্বাস এমনকি চোখের পলক ফেলার শব্দটুকুও বুঝি শোনা যাবে কান পাতলেই। কিছুটা সময় তাকিয়ে থেকে ফের চলতে শুরু করে বিপুল, তার হাতে ঝুলছে মরা বেড়ালটা। ঘন গাছের সারি পার হয়ে খোলা মাঠে হাঁটছে বিপুল। এমন খোলা মাঠেও আকাশে ফুটে থাকা তারা ব্যতিত আর কোন আলো চোখে পড়ে না। শ্মশানের মত নীরব মাঠে একাকী হেঁটে যায় বিপুল গোরস্থানের উদ্দেশ্যে।

অবশেষে এসে পৌঁছায় গোরস্থানে। ছুঁড়ে ফেলে দেয় নিজের হাতে করে বয়ে আনা বেড়ালটা। দূরে বেড়ালটার পতনের শব্দ হয় ঝপাৎ করে, সাথে যোগ হয় আরো কতগুলো শব্দ। একদল ভক্ষকের মাংস ছিড়ে খাওয়ার শব্দ। বেড়ালটা পড়ার সাথে সাথে যেন কারা তাকে ছিঁড়ে খুড়ে খেয়ে ফেলে। অন্ধকারে সে দৃশ্য দেখা যায় না, কিন্তু একদল মাংসাশীর খাদ্য গ্রহণের শব্দগুলো পরিষ্কার ফুটে উঠে নিঃশব্দ অন্ধকারকে ভেদ করে। এবার বিপুল ভীত হয়, দ্রুত পদে পিছিয়ে আসতে চায়। অন্ধকারের বুকে নিজের পথটা খুঁজে নিতে পিছন ফিরে সে। কিন্তু পথ খুঁজে পায়না, কেমন যেন ভ্যাবাচ্যাকা লাগে। পিছন হতে কারো পদধ্বনি শুনতে পায়, যেন সদলবলে কারা এগিয়ে আসছে তার দিকে বিপুল বেগে। শব্দেরা ক্রমশ নিকটবর্তী হতে থাকে, একসময় বিপুলের কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ অনুভূত হয়, ফিরে তাকায় বিপুল.... । বিদ্যুৎটা চলে গেল, ভূতের যে নাটকটা উৎসাহ নিয়ে দেখছিলাম কিন্তু সেটি আর শেষ করা হলো না।